আমি থাকি San Diego, California তে। গত দুদিন ধরে খুব ঝোড় হাওয়া বইছে। Southern California তে বৃষ্টি প্রায় হয়না বললেই চলে। যা একটু হয় তাও আবার শীতের সময়। তাই এইখানে মানুষ কিছুটা বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করে থাকে। সেই বৃষ্টিও খুব মুশল ধারে বৃষ্টি না, অল্প কিছুটা হয়ে শীতের পরিমাণটা বাড়িয়ে দেয়।
আমি Los Angeles county তে থাকতাম বহুদিন। কইদিন Northern California তেও থেকেছি। আমার মতে San Diego র মত এত আরামদায়ক আবহাওয়া পুরো যুক্ত রাষ্ট্রে নেই। বছরে বেশির ভাগ সময় ঝকঝকে রোদেলা আকাশ, নিরমল আরদ্রতাহীন বাতাস। কিন্তু সমুদ্রের কাছে হওয়ায় রৌদ্রের তীব্রতা নাই। আর পাহাড়, সুন্দর সমুদ্র সৈকতের অনন্য একটি জায়গা।
আমি ক্যালিফোর্নিয়াতে বেশ আরামেই আছি। আসল শীত কি কখনও বুঝিনি। শুধু বাংলাদেশের আবহাওয়ার যেই জিনিষটা খুব মিস করি তা হল বৃষ্টি।
তো যাইহোক। সেই ঝোড় হাওয়া কাল পর্যন্ত বিল্ডিঙের চিপায় চাপায় একধরনের কান্নার মত হুহু শব্দ করছিল। আজকে বিকেল থেকে কিছুটা ঝিরি ঝিরি শীতের বৃষ্টি শুরু হয়েছে। হুহু শব্দের আওয়াজ থেকে মনে পরে গেল বাংলাদেশে আমার কৈশোরের কথা। বাংলা মটর, ইস্কাটন রোডের একটা এপার্টমেন্টে থাকতাম সেই সময়। আমার রুমটা ছিল বিশাল, ঠিক পুরা ফ্ল্যাটের এক কোনায়। দরজাটা বন্ধ করলেই আমার ঘরটা একটা নিজস্ব পৃথিবী হয়ে যেত। একদিকের জানালায় ঘন জঙ্গল আর অন্য জানালায় পাশের লাগোয়া বিল্ডিং দেখা যেত। বাসার সামনেই ব্যাস্ত রাস্তা। অথচ আমার ঘর থেকে যানজটের গাড়িঘোড়ার শব্দ শোনা যেত না। পাশের জঙ্গলে আম, কাঁঠাল সহ অনেক ধরনের গাছ। মাঝে মাঝে বুনো বেড়াল, বেজি ইত্যাদিও দেখা যেত। প্রচণ্ড বাতাসে আমার ঘরের দরজা স্বশব্দে বন্ধ হয়ে যেত প্রায়ই। তাই সবসময় একটা ছোট টুল দিয়ে দরজা ঠেকা দিয়ে রাখতে হত। মাঝে মাঝে মধ্য রাতে মনে হত বাতাস আমার দরজার নব মুচড়ে খোলার চেষ্টা করছে। এটা কীভাবে সম্ভব? কি ভুতুরে ব্যাপার! আমি ঐ সময় একটু আধ্যাত্মিক টাইপ ছিলাম। যেই সময় মানুষ বাইরে হইচই করে, আমি দরজা বন্ধ করে ঝড় বৃষ্টি উপভগ করতাম, আর কুরান, শুনীলের ঐতিহাসিক উপন্যাশ, ভূতের বই, বিজ্ঞানের বই আরও বহু জিনিশ পড়তাম।
যখন ঝড় হত তখন বাতাস সেই জঙ্গল আর বিল্ডিঙের চিপায় ঠিক একি রকম হুহু কান্নার আওয়াজ করত। আজ সম্পূর্ণ ভিন্ন জায়গায় বসে পুরানো দিনের কিছু কথা মনে পরে গেল।